পোস্টগুলি

৬ ধরনের ”হ্যাট” হ্যাকারস এবং তাঁরা যেভাবে কাজ করে | scriptstore360 | স্ক্রিপ্ট ষ্টোর ৩৬০

আপনারা নিশ্চয়ই হ্যাকারদের চিনে থাকবেন এবং তাদের কাজ কী সে সম্পর্কেও কিছুটা ধারণা হয়তো আপনাদের আছে।

কিন্তু আপনারা কি জানেন তাদের কাজের মাঝেও রয়েছে বিচিত্রতা? তাদের কাজের বিচিত্রতার কারণেই তাদেরকে নানা ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- তাদের অনেক কেই ডাকা হয় "হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার" আবার অনেক কেই "ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার" ও বলা হয়। কিন্তু এ রকম ভাবে কেন তাদের ডাকা হয়?

Hacker

কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে হ্যাকারদের ৬ টি ভাগে ভাগ করা যায়।

  • ১. হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার
  • ২. ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার
  • ৩. গ্রে হ্যাট হ্যাকার
  • ৪. রেড হ্যাট হ্যাকার
  • ৫. ব্লু হ্যাট হ্যাকার ও
  • ৬. গ্রিন হ্যাট হ্যাকার

কোন ধরনের হ্যাকার কি কাজ করে তাই এখানে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপনারা শুধু চোখ বুলিয়ে দেখে নিবেন। আশা করছি ভালো লাগবে।

হ্যাকার শব্দটা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা আছে। আর তা হচ্ছে, হ্যাকার মানেই খারাপ লোক, যে লুকিয়ে থেকে অন্যের কম্পিউটারে নেটওয়ার্ক সিস্টেমের মাধ্যমে প্রবেশে করে অন্যের ক্ষতি করে। এই ধারণাটা শুধু এক ধরনের হ্যাকারের কাজ হলেও অন্য হ্যাকারদের কাজ মোটেও এটা নয়। মুল কথা হচ্ছে, হ্যাকার মানেই খারাপ, এ ভ্রান্ত ধারণা অধিকাংশের থাকলেও সত্য এই যে, সব হ্যাকার খারাপ নয়। হ্যাকারদের মাঝেও ভালো মন্দ আছে। কারো দ্বারা ক্ষতি হলেও, কারো কারো দ্বারা উপকারও হয়। কোন কোন হ্যাকার কোন ক্ষতি সাধন করে না।

তাহলে আপনারাই বলুন হ্যাকারদের মাঝে বিচিত্রতা আছে কি নাই? এবং আপনি কি বলতে পারেন যে তারা কি এমন ভাবে কাজ করে যে, তাদের কাজের ধরন অনুযায়ী তাদেরকে আলাদা করা যায় এবং আলাদা নামে ডাকা যায়? আপনি কি জানেন, কেন হ্যাকাররা হ্যাক করে থাকে?

যে কারণে হ্যাকাররা হ্যাক করে

যে কারণে হ্যাকার হ্যাক করে

আপনি কি জানেন হ্যাকারদের সাফল্য কোথায়? তাদের সাফল্যের বিশালতা কিভাবে হিসেবে আনা হয়? সাধারণ ভাবেই তারা প্রথমে একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে এবং ধীরে ধীরে সেই লক্ষের কাছাকাছি পৌঁছানোর জন্য কাজ করে। তাদের লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করতে তারা কাজ শুরু করে। লক্ষ্য বাস্তবতা লাভ করলে, সেই লক্ষ্যই তাদের এক হ্যাকার থেকে অন্য হ্যাকারে রূপান্তরিত করতে পারে।

অর্থাৎ, কোন সিস্টেমের দুর্বলতা কে লক্ষ্য করে যদি কোন হ্যাকার কাজ করে এবং তা সেই হ্যাকার খুঁজে পায় তাহলে সে লক্ষ্য বাস্তবতা পায়। ফলে হ্যাকার যদি সিস্টেমের দুর্বলতার ব্যবহার করে সিস্টেমের ক্ষতি করে, সিস্টেমের তথ্য চুরি করে, তাহলে সে হবে এক ধরনের হ্যাকার। আর তা না করে যদি সিস্টেমের দুর্বলতা ফিক্স করে বা সিস্টেমের মালিককে জানায়, তবে তা হবে আরেক ধরনের হ্যাকার।

কেন হ্যাকাররা সিস্টেম হ্যাক করে থাকে, তার কারণ নিচে আলোচনা করা হলো।

যখন কোন হ্যাকার কে কাজের জন্য নিয়োগ দেয়া হয় তখন হ্যাকার সিস্টেম থেকে সংবেদনশীল তথ্য গুলো চুরি করে। যেমন- ক্রেডিট কার্ড এর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা সংখ্যা ইত্যাদি হতে পারে। ফলে যে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির আওতায় হ্যাকার কাজ করেছে সে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি তাকে বিশাল অর্থ প্রদান করে। এমনকি যে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির তথ্য চুরি হয়েছে তারাও বিপদ থেকে বাঁচার জন্য অর্থ প্রদান করতে প্রস্তুত থাকে।

কারণ তাদের কাছে তথ্য উদ্ধার একান্তই জরুরী। আবার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োগ দেয়া হ্যাকার তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে ইতিবাচক কাজ করে মোটা অংকের বেতন নিয়ে থাকে। তাই বলা যায়, আর্থিক লাভ হ্যাকারদের অন্যতম এক প্রধান উদ্দেশ্য।

আর্থিক লাভ

বিশাল আর্থিক লাভের মাধ্যমে হ্যাকাররা নিজেদের সমৃদ্ধ করে। নিজেকে ধনী বা সমৃদ্ধ করার জন্যই তারা হ্যাকিং উপায় বেছে নেয়। অর্থাৎ ধনী হওয়ার জন্যই অনেকে হ্যাকার হয় বা হ্যাকার হওয়ার স্বপ্ন দেখে বা হ্যাকার হতে চেষ্টা করে।

১. আত্ম-তৃপ্তি

Self-Gratification

কিছু কিছু হ্যাকার আত্মতৃপ্তির জন্য নেটওয়ার্ক সিস্টেমের দুর্বলতা খুঁজে বের করে। কারণ নেটওয়ার্ক সিস্টেম গুলোকে বা অ্যাপ্লিকেশন গুলোকে ত্রুটিহীন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা সর্বদাই ডেভেলপারদের থাকে। ফলে আপাত দৃষ্টিতে নেটওয়ার্ক সিস্টেম বা অ্যাপ্লিকেশন গুলো ভেজাল মুক্ত মনে হয়।

তবে ত্রুটিযুক্ত অ্যাপ্লিকেশন বা সিস্টেম যেহেতু আশানুরূপ কাজ দিতে পারে না তাই এর ত্রুটিগুলো বের করার প্রয়োজন পরে। হ্যাকার নেটওয়ার্ক সিস্টেম বা অ্যাপ্লিকেশনের ত্রুটিগুলো বের করে একধরণের রোমাঞ্চকর তৃপ্তি পায়। আর ত্রুটি বের করে হ্যাকাররা নিজের দক্ষতার পরিমাপ করে এবং নিজের প্রতি নিজের বিশ্বাস আরো প্রখর করে। অর্থাৎ, আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্যই হ্যাকার নানা নেটওয়ার্ক সিস্টেম হ্যাক করে থাকে।

হ্যাকার আত্মতৃপ্তির জন্য বা নিজের দক্ষতার পরিধি জানার জন্য হ্যাক করে এ বিষয়টা আপনাদের বোধগম্য হলো কি না তা জানি না। তবে, এই ধরনের হ্যাকাররা নিজের তৃপ্তির জন্যও হ্যাক করে থাকে। এই ধরনের হ্যাকাররা নিজের দক্ষতার পরিধি নিজের কাছে এবং অন্যের কাছে প্রমাণ করার জন্য যে কোন সীমা অতিক্রম করতে পারে। অর্থাৎ তারা বৈধ-অবৈধ, লাভ-ক্ষতি বিচার না করে নেটওয়ার্ক সিস্টেম হ্যাক করে নিজের আওতায় নিয়ে থাকে।

২. আর্থিক লাভ

Financial Gains

আমরা হয়তো জানি যে, কোন সিস্টেম হ্যাক করা সহজ কাজ নয়। অর্থাৎ, সিস্টেম হ্যাক করা কোন সহজ কাজ নয়। এটা করার জন্য চাই প্রযুক্তিগত বিশেষ জ্ঞান। আর খুব কম সংখ্যক লোকেরই এ ধরনের জ্ঞান থাকে। ফলে তাদেরকে যখন কোন কাজের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন তারা সে কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে অনেক টাকা দাবি করে।

যেহেতু হ্যাকার খুব কম পাওয়া যায় তাই নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানে আমরা বাধ্য হই। সাইবার আক্রমণে হ্যাকারদের প্রয়োজন পরে এবং তারা বিপুল অর্থ দাবি করে। অনেক সময় অবৈধ বিষয় হলে হ্যাকার ব্লাকমেইল ও করে থাকে। এখান থেকে বোঝা যায় যে, সাইবার আক্রমণ গুলো আর্থিক লাভের উদ্দেশ্যেই করা হয়। সহজ ভাবে বলতে গেলে, অনেক সময় আর্থিক লাভের উদ্দেশ্যেই হ্যাকার সিস্টেম হ্যাক করে থাকে।

৩. গোপন তথ্যতে প্রবেশ করা

Access to Confidential Information

আমরা জানি যে, আর্থিক লাভের জন্য হ্যাকাররা কোন সিস্টেম হ্যাক করে থাকে। কিন্তু কোন কোন সময় হ্যাকারদের হ্যাক করে টাকা নেওয়ার উদ্দেশ্য থাকে না। অনেক সময় তারা গোপন তথ্য নেওয়ার জন্য নেটওয়ার্ক সিস্টেম হ্যাক করে থাকে। কারণ তারা সে তথ্য গুলো জানে না এবং তথ্য গুলো জানা একান্ত জরুরী। তথ্য গুলো জানার প্রবল ইচ্ছার কারণেই হয়তো তারা নেটওয়ার্ক সিস্টেম হ্যাক করে থাকে।

কোন কোন হ্যাকার অনেক সময় প্রতিশ্রুতি দেয় যে, তাকে এই গোপন তথ্য সে যে করেই হোক এনে দেবে। ফলে প্রতিশ্রুতিবব্ধ এই হ্যাকার প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে অর্থাৎ তথ্য পাওয়ার জন্য যে কোন সীমা অতিক্রম করতে পারে।

যদিও বা এটা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের গোপনীয় তথ্য এবং তা ঐ প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে অথবা অন্য প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে চুরি করা তথ্য তবুও হ্যাকার তা হ্যাক করে গোপনীয় সেই তথ্য চুরি করে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে। অর্থাৎ, কোন প্রতিষ্ঠানের তথ্য চুরি করতে পিছুপা হবে না এই সকল হ্যাকাররা যদিও তা ঐ সকল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে বা ক্ষতি করতে ব্যবহৃত হবে।

হ্যাট হ্যাকারদের প্রকার এবং তারা যে ভাবে কাজ করে

Kind of Hacker and How to they operate

হ্যাকারদের কাজের ধরনের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। অর্থাৎ, বিচিত্রতা হ্যাকারদের ও অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হ্যাক হওয়া সিস্টেমের সাথে মালিকের সম্পর্ক কেমন তা বিবেচনা করে হ্যাকারদের প্রকার নির্ধারিত হয়। অনেক সময় হ্যাকার এবং নেটওয়ার্ক সিস্টেমের মালিক একই সাথে কাজ করে থাকে। অর্থাৎ হ্যাকারের কাছে নেটওয়ার্ক ব্যবহারের বা হ্যাক এর জন্য বৈধ অনুমোদন থাকে।

আবার বিপরীত ভাবে হ্যাকারের সাথে নেটওয়ার্ক সিস্টেমের মালিকের কোন সম্পর্ক নাও থাকতে পারে। অর্থাৎ তাদের নেটওয়ার্ক সিস্টেমে প্রবেশের বৈধ অনুমোদন থাকে না। তারা অবৈধ ভাবে নেটওয়ার্ক সিস্টেম হ্যাক করে থাকে।

তো, এরকম বিষয় গুলো মাথায় রেখে হ্যাকারদের কয়েকটি প্রকারে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। সুতরাং, নিচে হ্যাকারদের কয়েকটি প্রকার এবং তাদের কাজ করার ধরন উল্লেখ করা হলো। চলুন চোখ বুলিয়ে একবার দেখে নিই হ্যাকারদের প্রকার ও তাদের কাজের ধরনগুলো সম্পর্কে।

১. ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার

Black hat hacker

ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার বা কালো টুপি ওয়ালা হ্যাকার এর কথা আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন। হ্যাকার দের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ এবং ভয়ংকরী হ্যাকার হলও ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার। এদেরকে দেখা আর সিনেমায় ভিলেন কে দেখা একি কথা।

এরা নিজ স্বার্থের জন্য যে কোন সীমা লঙ্ঘন করতে পারে। আপনি এদেরকে এভাবে কল্পনায় জায়গা দিতে পারেন, কালো টুপি ও কালো স্যুট পরিধান করা এবং মুখে ভয়ংকর হ্যাকার মাস্ক পরে নেটওয়ার্ক সিস্টেমে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে বা কোন প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। হ্যাকারদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হ্যাকার হলও ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার।

এদের মাঝে মনুষ্যত্ব বলে কিছু নেই, এরা ভালো মানুষের কাতারে কখনোই জায়গা পাবে না। এরা যদি কখনো কোন সিস্টেম হ্যাক করে বা কারো সিস্টেম হ্যাক করে তাহলে সে তার কি পরিমাণ ক্ষতি করবে তা আপনি আমি ধারণাও করতে পারব না।

একজন ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারের কাজগুলো হলোঃ

  • ফিশিং ম্যাসেজ পাঠিয়ে থাকে। ফিশিং হলো এক ধরনের প্রতারণামূলক আক্রমণ, যার মাধ্যমে আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো চুরি হবে এবং আপনি জানবেন ও না। সেই লিংক বা মেসেজটিকে দেখে মনে হবে, এটি বৈধ কোন সাইট থেকে এসেছে।
  • নেটওয়ার্ক সিস্টেমে সাইবার আক্রমণ চালিয়ে থাকে। ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে অবৈধ ভাবে নেটওয়ার্ক সিস্টেমে প্রবেশ করে থাকে।
  • ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করে থাকে। অন্য ব্যক্তির কাছে বা প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্যগুলো বিক্রিও করে থাকে। আবার অনেক সময় যে প্রতিষ্ঠান থেকে চুরি করেছে সেই প্রতিষ্ঠানে জানিয়ে ব্লাকমেইলও করে থাকে। অর্থাৎ, Ransomware আক্রমণের মাধ্যমে ব্লাকমেইল করে। Ransomware হলো একটি সফটওয়্যার যা মূলত ক্ষতিকারক সফটওয়্যার। এটি ব্যক্তির কম্পিউটারে প্রবেশাধিকার ব্লক করে। ফলে ভিকটিম টাকা দিতে বাধ্য হয়। টাকা না দিলে ডেটা চিরতরে নষ্ট হতে পারে বা মুক্তিপণ ফি বেড়ে যেতে পারে।
  • ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে আর্থিক প্রতারণাতেও তারা পিছু পা হয় না।

২. হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার

White hat hacker

আপনারা হয়তো হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার নামটি শুনে থাকবেন। এরা এমন এক ধরনের হ্যাকার যাদেরকে আসলে সিনেমার হিরোর সাথে তুলনা করা যায়। অর্থাৎ, হ্যাকারদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো এবং সমস্ত ভালো গুণাবলী যেন এদের মাঝেই বিদ্যমান। এরা আসলে ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার এর সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্র।

এরা কাজে খুবই দক্ষ হয়ে থাকে। বুঝতেই পারছেন ভিলেন এর সাথে পাল্লা দিয়ে চলাই এদের কাজ। এরা এদের দক্ষতা গুলোকে ইতিবাচক কাজে ব্যবহার করে। কখনোই অবৈধ কোন কাজ করে না। যখন কোন ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোন সিস্টেমে সাইবার আক্রমণ চালায় তখন তাদের আক্রমণ থেকে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সিস্টেম ও সিস্টেমের তথ্যকে রক্ষা করাই হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার এর কাজ। সত্যিই এই কাজগুলো যেন হিরোর কাজের সাথে হুবহু মিলে যায়।

হোয়াইট হ্যাট হ্যাকারকে এথিক্যাল হ্যাকার হিসেবে উল্লেখ করা যায়। অর্থাৎ, ইনারা কোন নেটওয়ার্ক সিস্টেমের মালিকের অনুমতি নিয়ে কার্য সম্পাদন করে। ইনারা বৈধ ভাবে সর্বদাই কাজ করে এবং আইনগত সীমা লঙ্ঘন করে না। অর্থাৎ, আইন মেনে বৈধ ভাবে মালিকের অনুমতি নিয়ে কাজ করে থাকে।

একজন হোয়াইট হ্যাট হ্যাকারের কাজগুলো হলোঃ

  • শুরুর দিকে যখন কোন নেটওয়ার্ক সিস্টেম বা অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয় তখন সেটাতে বেশ কিছু বাগ বা দুর্বলতা থাকে। যার ফলে হ্যাকার সহজেই নেটওয়ার্ক সিস্টেম বা অ্যাপ্লিকেশনটাকে হ্যাক করতে পারে। সাইবার অপরাধী কর্তৃক সেই ভুল বা দুর্বলতা বের হওয়ার পূর্বেই সেই দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করে তা মেরামত করা বা ঠিক করা।
  • সাইবার আক্রমণ থেকে নেটওয়ার্ক সিস্টেমকে পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
  • নেটওয়ার্ক সিস্টেমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় টুলস তৈরি করা। যেমন- ম্যালওয়্যার, অ্যান্টি-ভাইরাস ও ফায়ারওয়াল ইত্যাদি তৈরি করা।

৩. গ্রে হ্যাট হ্যাকার

Gray hat hacker

গ্রে হ্যাট হ্যাকার এর কাজগুলো কিছুটা ভিন্ন ধরনের। এদেরকে ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার ও হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার এর মাঝামাঝি অবস্থানে রাখা যায়। এদের কার্যক্রমে অনেকটাই ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। যদিও গ্রে হ্যাট হ্যাকাররা মালিকের অনুমতি না নিয়েই নেটওয়ার্ক সিস্টেমে প্রবেশ করে বা হ্যাক করে কিন্তু এদের উদ্দেশ্য মোটেও নেটওয়ার্ক সিস্টেমের ক্ষতি করা বা মালিকের ক্ষতি করার জন্য থাকে না। এমনটা গ্রে হ্যাট হ্যাকাররা মালিকের সুদৃষ্টি পাওয়ার জন্যে বা আর্থিক সুবিধা পাওয়ার জন্য করে থাকে।

অর্থাৎ, নেটওয়ার্ক সিস্টেমের দুর্বলতা খুঁজে বের করে তা মালিককে জানায় এবং মালিকের দৃষ্টি নিজেদের দিকে ন্যায় এবং বাগ গুলোকে ঠিক করার জন্য নিয়োগ পেতে চায়। ফলে মালিক যদি তাদের নিয়োগ দেয় তাহলে তারা বৈধ কাজ পায়। বিনিময়ে পারিশ্রমিক হিসেবে টাকা নিয়ে থাকে।

একজন গ্রে হ্যাট হ্যাকারের কাজগুলো হলোঃ

  • কোন নেটওয়ার্ক সিস্টেম বা অ্যাপ্লিকেশনের দুর্বলতা বা বাগ খুঁজে বের করা এবং তা ঠিক করা।
  • কোন নেটওয়ার্ক সিস্টেমের দুর্বলতার বা বাগের জন্য উপযুক্ত সমাধান সুপারিশ করে থাকে।
  • সাইবার আক্রমণ থেকে নেটওয়ার্ক সিস্টেমকে রক্ষার জন্য সাইবার নিরাপত্তা বাড়িয়ে তোলে।

৪. রেড হ্যাট হ্যাকার

Red hat hacker

হ্যাকারদের কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে আরেক ধরনের হ্যাকার পাওয়া যায় যারা রেড হ্যাট হ্যাকার নামে পরিচিত। সাধারণত এরা অবৈধ ভাবে বা ভুল পথের নেটওয়ার্ক সিস্টেমে বিচরণ করে থাকে। তবে এদের উদ্দেশ্য মোটেও খারাপ নয়। সাইবার আক্রমণ থেকে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর মতো ভালো উদ্দেশ্য এদের রয়েছে।

তাইতো এরা হোয়াইট হ্যাট হ্যাকারদের সাথে নিজেদের মতামত শেয়ার করে এবং অনেক সময় মিলে ঝিলে কাজ করে। এরা সাইবার আক্রমণের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরিতে যে কোন উপায় অবলম্বন করে থাকে অর্থাৎ এরা আইন সীমা লঙ্ঘন করে হলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে অবৈধ পথ অনুসরণ করতেও এরা পিছু পা হয় না। অর্থাৎ রেড হ্যাট হ্যাকাররা সঠিক কাজ অনেক সময় ভুল পদ্ধতিতে করে থাকে।

একজন রেড হ্যাট হ্যাকারের কাজগুলো হলোঃ

  • অনেক সময় ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার সাইবার আক্রমণের জন্য পরিকল্পনা করে থাকে। তাদের এই পরিকল্পনা নষ্ট করতে রেড হ্যাট হ্যাকার ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারের নেটওয়ার্ক সিস্টেমে প্রবেশ করে।
  • খারাপ হ্যাকার গুলোর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় টুলস সক্রিয় করে। যেমন- ম্যালওয়্যার ও অ্যান্টি-ভাইরাস চালু করে।
  • সাইবার আক্রমণ থেকে সিস্টেম ও সিস্টেমের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

৫. ব্লু হ্যাট হ্যাকার

Blue hat hacker

আমরা হয়তো অনেকেই ব্লু হ্যাট হ্যাকার এর কথা শুনে থাকবো। আবার কেউ কেউ নাও শুনে থাকতে পারি। ব্লু হ্যাট হ্যাকারদের মূলত দুটি ধরন হয়ে থাকে।

ব্লু হ্যাট হ্যাকারদের মুল কাজ হচ্ছে প্রতিশোধ নেয়া। কোন নেটওয়ার্ক সিস্টেম বা অ্যাপ্লিকেশন হ্যাকিং এর শিকার হলে, যে বা যারা সিস্টেমটা হ্যাক করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কাজটা ব্লু হ্যাট হ্যাকাররাই করে থাকে। এরা খ্যাতি বা আর্থিক উন্নতির জন্য কখনোই কাজ করে না। যখন কোন কাজে কোন সিস্টেম হ্যাকিং এর স্বীকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা অন্যের দ্বারা অন্যায়ের স্বীকার হয় তখন এরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিশোধ নিয়ে থাকে।

একজন ব্লু হ্যাট হ্যাকার কখনোই হাল ছেরে দেয় না যতক্ষণ পর্যন্ত না পুরোপুরি প্রতিশোধ নেওয়া না হয় অর্থাৎ খারাপ হ্যাকারদের অপমানিত ও বিব্রত করতে একজন ব্লু হ্যাট হ্যাকার সীমা লঙ্ঘন করতেও পিছ পা হয় না।

একজন ব্লু হ্যাট হ্যাকার তার কাজের দিক দিয়ে অত্যন্ত দক্ষ হয়ে থাকে। ফলে তাদেরকে প্রায়ই ডাকা হয় নেটওয়ার্ক সিস্টেমের দুর্বলতা গুলো খুঁজে নিতে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ও তারা আমন্ত্রিত হয়ে থাকে। উনারাও স্বাধীন ভাবে নিজের সাইবার সিকিউরিটিতে দক্ষতায় বিশেষজ্ঞতা অর্জন করে থাকে।

আপনি যদি আপনার নেটওয়ার্ক সিস্টেম এর সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চান, তাহলে একজন ব্লু হ্যাট হ্যাকারই হবে উপযুক্ত ব্যক্তি যাকে আপনি নিয়োগ দিতে পারেন। উনারা মূলত কোন নেটওয়ার্ক সিস্টেমের সাইবার নিরাপত্তার জন্য মালিকের অনুমতি নিয়ে সিস্টেমে এক ধরনের আক্রমণ শুরু করে এবং দুর্বলতা খুঁজে বের করে তা সংশোধন করে।

৬. গ্রিন হ্যাট হ্যাকার

Green hat hacker

গ্রিন হ্যাট হ্যাকার বা সবুজ টুপি ওয়ালা হ্যাকার কাদেরকে বলা হয় তা আপনি কি জানেন? যারা আসলে হ্যাকিং জগতে নতুন অর্থাৎ কেবল পা রেখেছে হ্যাকিং এর দুনিয়ায়, তাদেরকে বলা হচ্ছে গ্রিন হ্যাট হ্যাকার। এরা কেবল হ্যাকিং এর কলাকৌশল গুলো অন্যের কাছ থেকে শিখছে এবং কিছু কিছু প্রয়োগ ও করছে। কারণ তারা দক্ষ হ্যাকার হতে আগ্রহী।

এর ফলে তারা নিজেদেরকে প্রমাণ করতে বা নিজের দক্ষতা বা যোগ্যতাকে উপস্থাপন করতে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করে থাকে। সত্যি কথা বলতে, গ্রিন হ্যাট হ্যাকার কে বলা হয় নবাগত হ্যাকার বা নতুন আগত হ্যাকার।

গ্রিন হ্যাট হ্যাকার এর কাজ গুলোতে অনেকটা ঝুঁকি থাকে। কারণ আমরা জানি যে, অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী। গ্রিন হ্যাট হ্যাকার যখন কোন সিস্টেমে হ্যাক করে তখন সে ঠিক ততোটা সতর্ক থাকে না যতোটা একজন দক্ষ হ্যাকার থাকে। এর কারণ হিসেবে স্বল্প অভিজ্ঞতা কেই দায়ী করা যেতে পারে।

গ্রিন হ্যাট হ্যাকার কোন নেটওয়ার্ক সিস্টেম হ্যাক করার সময় বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। কারণ তারা নিজেকে প্রমাণের জন্য অনেক সময় অন্ধভাবে নেটওয়ার্ক সিস্টেমে বিচরণ করে। তাই তাদের দ্বারা গুরুত্বপূর্ণ কাজে না যাওয়াই উত্তম।

সাইবার সিকিউরিটিতে ভারসাম্য সৃষ্টি করা

Balance in Cyber Security

উপরে আলোচিত আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্ট ভাবে বলা যায় যে, হ্যাকার দের মাঝেও ভালো মন্দ আছে। সব হ্যাকার খারাপ নয় বা হ্যাকার অর্থই খারাপ লোক নয়। আপনারা কি বলেন, তাই নয় কি?

ভালো এবং খারাপ হ্যাকার মিলেই হ্যাকার জগত আর এ জগতের ভারসাম্য ভালো-মন্দ দুই ধরনের হ্যাকাররাই বজায় রাখছে। সাইবার সিকিউরিটিতে ভারসাম্য রক্ষায় বিভিন্ন ধরনের হ্যাকার এর গুরুত্ব অপরিসীম। খারাপ হ্যাকাররা যেমন ইন্টারনেট সিস্টেম বা অ্যাপ্লিকেশন এর ক্ষতি করে প্রতিনিয়তই বিপর্যয় সৃষ্টির চেষ্টা করছে ঠিক তেমনই ভালো হ্যাকাররা ক্ষতি গুলো কে পুষিয়ে নেওয়ার এবং বিপর্যয় থামাতে প্রতিনিয়ত কাজ করছে।

এভাবেই ভালো ও মন্দ হ্যাকাররা সাইবার সিকিউরিটিতে ভারসাম্য বজায় রাখছে। সাইবার অপরাধ বা নেটওয়ার্ক সিস্টেমের সাথে সম্পর্কযুক্ত অপরাধ হলও এমন এক অপরাধ যা ব্যক্তির আর্থিক হুমকির কারণ হতে পারে। এ অপরাধ মানে ব্যক্তির নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন।

একজন সাইবার অপরাধী গুরুতর আর্থিক হুমকির মুখে ফেলতে পারে জাতিকে। কোন কোন সময় আমাদের অভ্যন্তরীণ সাইবার সিকিউরিটি অতোটাও শক্তিশালী হয় না যতটা দক্ষ কিনা এক জন সাইবার অপরাধী।

হ্যাকারদের কাছে থেকে ভালো সেবা পেতে হলে অনেক সময় মোটা অংকের টাকা প্রদানের প্রয়োজন পরে। এছাড়াও তারা অনেক সময় বাধ্য করে মোটা অংকের টাকার জন্য। কারণ তারা আপনার নেটওয়ার্ক সিস্টেমের দুর্বলতাটা জেনে ফেলে এবং বিপদে ফেলার ভয় দেখিয়ে টাকা নেয় অথবা বিপদে ফেলায়। তাদের কাছ থেকে সাবধান থাকুন এবং নিজের নেটওয়ার্ক সিস্টেমের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।

তো বন্ধুরা এই ছিলো আজকের টিউন। আশাকরি ভালো লেগেছে। দেখা হচ্ছে পরবর্তী কোন এক টিউনে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

🌟 সম্মানিত ষ্ক্রিপ্ট ষ্টোর ৩৬০ পাঠকরা! 🌟

আপনি আমাদের আলোচনায় জড়িত থাকতে পেরে আমরা আনন্দিত। প্রত্যেকের জন্য একটি সম্মানজনক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য, আমরা নিম্নলিখিত নির্দেশিকাগুলির সাথে আপনার সহযোগিতার অনুরোধ করছিঃ

১. গোপনীয়তা রক্ষাঃ অনুগ্রহ করে আপনার মন্তব্যে সংবেদনশীল বা ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।

২. ইতিবাচকতা ছড়ানোঃ ঘৃণাত্মক বক্তৃতা বা আপত্তিজনক ভাষার প্রতি আমরা শূন্য-সহনশীলতার নীতি বজায় রাখি। আসুন আমাদের কথোপকথনকে সম্মানজনক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ রাখি।

৩. পছন্দের ভাষাঃ ইংরেজি বা বাংলা’তে নির্দ্বিধায় নিজেকে প্রকাশ করুন। এই দুটি ভাষা আমাদের পরিষ্কার এবং সুসংগত আলোচনা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

৪. বৈচিত্র্যকে সম্মানঃ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য, আমরা দয়া করে অনুরোধ করছি যে আপনি আপনার মন্তব্যে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করা এড়িয়ে চলুন।

মনে রাখবেন, আপনার মতামতগুলি মূল্যবান, এবং আমরা আমাদের পাঠকদের সবার জন্য একটি স্বাগত জানানোর জায়গা করে তোলার জন্য আপনার প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করি৷ আসুন গঠনমূলক এবং সম্মানজনক আলোচনার মাধ্যমে একসাথে শিখতে এবং বৃদ্ধি পেতে থাকি।

আমাদের ষ্ক্রিপ্ট ষ্টোর ৩৬০ ওয়েবসাইটে যুক্ত থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ! 🌟
কুকি সম্মতি
আমরা ট্রাফিক বিশ্লেষণ করতে, আপনার পছন্দগুলি মনে রাখতে এবং আপনার অভিজ্ঞতাকে অপ্টিমাইজ করতে এই সাইটে কুকিজ পরিবেশন করি৷
দূক্ষিত
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে ইন্টারনেটের সাথে সংযোগ করুন এবং আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.